রাউটার কি – এটা এ সম্পর্কে ধারনা নেওয়া যতটা না গুরুত্বপূর্ন তার থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ন হলো একটি রাউটার কেনার আগে কি কি বিষয় এর দিকে লক্ষ্য রাখা উচিৎ।
একটি ওয়াইফাই রাউটার কেনার আগে অনেক গুলো বিষয়ের দিকে গুরুত্ব দিতে হয়। আজকের আর্টিকেলের বিষয়বস্তু কোন কোন বিষয় গুলো বিবেচনা করে আপনি একটি ভালো রাউটার পছন্দ করতে পারেন।
ওয়াইফাই রাউটার কি?
আমরা দৈনন্দিন জীবনে নানার প্রকার কম্পিউটার সরন্জাম ব্যবহার করে থাকি যেমন, পার্সোনাল কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মোবাইল এবং বিভিন্ন স্মার্ট ডিভাইস। আর এসব ডিভাইস গুলোকে এক সাথে সংযুক্ত করতে এবং পরিচালনা করতে তাদের মধ্যে সংযোগ স্থাপন প্রয়োজন।
কিন্তু এসব ডিভাইস গুলো তো তার বা ক্যাবল দিয়ে এক সাথে সংযুক্ত করা সম্ভব নয়। আর তাই এখানেই প্রয়োজন হয় ওয়াইফাই সংযোগের। যার কাজ করে থাকে এই ওয়াইফাই রাউটার।
কিন্তু এটা তো গেলো অনেকগুলো ডিভাইসকে এক সাথে সংযুক্ত করার কাজ। তাহলে আমারা সাধারন মানুষরা মূলত ওয়াইফাই রাউটার বলতে কি বুঝি?
ওয়াইফাই রাউটার হলো মূলত তারবিহীন যোগাযোগ ব্যবস্থা। যেখানে ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়ার মাধ্যমে আমরা আমাদের একধিক ডিভাইসে ইন্টারনেট সেবা পেয়ে থাকি। বাসা হোক কিংবা অফিস বা কোন আড্ডার ক্যাফে কোথাও আমরা এখন ওয়াইফাই ছাড়া কল্পনাই করতে পারি না। আর আমাদরে এই চাহিদা পূরন করে চলেছে ওয়াইফাই রাউটার।
আরো পড়ুন –
- মোবাইল ফোনের ব্যাটারি ভালো রাখতে এবং দীর্ঘ সময় ব্যবহার উপযোগী রাখতে যে কাজ গুলো করবেন।
- ব্লগিং কি? কি কি উপায়ে ব্লগিং থেকে উপার্জন করা যায়?
ওয়াইফাই রাউটার কেনার আগে যে ১০ টি বিষয় লক্ষ্য রাখবেন।
ভালো কভারেজ এবং ফাস্ট ইন্টারনেট সেবা পেতে একটি ভালো মানের রাউটার এর বিকল্প নেই। আর শুরুর দিকে একটি ভালো মানের রাউটার কেনা মোটেও সহজ কাজ নয়।
বিভিন্ন রাউটার কোম্পানি গুলো তাদের প্রডাক্টের বিপননের ক্ষেত্রে যে সব সংক্ষিপ্ত বিবরন ব্যবহার করে তা একটি ভালো রাউটার ক্রয় করার ক্ষেত্রে মোটেও যথেষ্ট নয়। তাছাড়া কোম্পানির নাম দেখে কখনোই একটি ভালো মানের ওয়াইফাই রাউটার নির্বাচন করা যায় না।
সুতরাং, ওয়াইফাই রাউটার কেনার আগে বাজেট এবং প্রয়োজন উপর ভিত্তি করে আপনার জন্য সেরা রাউটারটি নির্বাচন করতে আমাদের রাউটারের উপর এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ন পড়ুন। আশা করি অনেক উপকৃত হবেন।
তাহলে চলুন এক নজরে দেখে নেওয়া যাক একটি ওয়াইফাই রাউটার কেনার আগে যে সব বিষয়ের দিকে লক্ষ্য রাখাবেন –
- 802.11 IEEE স্ট্যান্ডার্ড
- সিঙ্গেল ব্যান্ড নাকি ডুয়াল ব্যান্ড
- রাউটারের প্রসেসর এবং র্যাম
- রাউটার পারফর্মেন্স
- নেটওয়ার্ক কভারেজ রেন্জ
- ব্যান্ড-উইথ কন্ট্রোল
- Quality of Service (QoS)
- VPN, antivirus, firewall Protection
- USB Port 3.0
- রাউটার স্মার্টফোন অ্যাপ
1. 802.11 IEEE স্ট্যান্ডার্ড
নেটওয়ার্কিং ডিভাইস নির্মাতা কোম্পানি গুলো IEEE অর্থাৎ ইনস্টিটিউট অফ ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইন্জিনিয়ার্স দ্বারা ইন্জিনিয়ারিং স্ট্যান্ডার্ড গুলোতে তাদের নেটওয়ার্কিং সরন্জাম গুলো তৈরি করে থাকে।
সাধারনত ওয়ারলেস রাউটার গুলোর জন্য IEEE 802.11 স্ট্যান্ডার্ড ব্যবহার করা হয়। IEEE দ্বারা নির্ধারিত 802.11 এর অনেক গুলো ভার্শন রয়েছে যেমন, 802.11n এবং পরবর্তী স্পেসিফিকেশনগুলি — 802.11ac এবং 802.11ax, এছাড়া 802.11b এবং 802.11g প্রথমত বাসায় ব্যবহৃত ওয়ারলেস স্ট্যান্ডার্ড রাউটার যার ব্যবহার বর্তমানে কমে আসছে।
আমাদের দেশে IEEE 802.11 b/g/n মডেলের রাউটার গুলো বেশি ব্যবহৃত হয়, এবং আপনি রাউটার কিনতে গেলে মূলত এই স্ট্যান্ডার্ড এর রাউটার গুলো Available পাবেন। বাসায় এবং অফিসে স্বাভাবিক ভাবে ব্যবহারের জন্য এই 802.11 b/g/n স্ট্যান্ডার্ড এর রাউটার গুলো কিনতে পারেন।
আবার আপনি যদি সর্বশেষ আপগ্রেড স্ট্যান্ডার্ড এর ওয়ারলেস রাউটার ব্যবহার করতে চান তাহলে 802.11ac এবং 802.11ax এর রাউটার ক্রয় করতে পারেন। এগুলো 802.11 b/g/n এর আপডেট সংস্করন। তবে আপনি যদি 802.11ac এর 5 GHz ডাটা ট্রান্সমিট সুবিধা পেতে চান তাহলে আপনার ব্যবহৃত স্মার্ট ডিভাইসটির ও 5 GHz এর ডাটা ট্রান্সমিশন ক্ষমতা থাকতে হবে।
কিন্তু আমাদের দেশে বাজেটের মধ্যে কমদামী মোবাইল ডিভাইস গুলো 5 GHz এর ডাটা ট্রান্সমিশন সাপোর্টেড নয়। তাই সর্ব সাধারনের কথা চিন্তা করে 802.11 b/g/n এখনো আমাদের জন্য স্ট্যান্ডার্ড রাউটার।
802.11 b/g/n মডেলের রাউটার এর মূল্য তুলনামূলক ভাবে সস্তা হয়ে থাকে। অপরদিকে 802.11ac এবং 802.11ax এর মূল্য একটু বেশিই হয়ে থাকে।
802.11 b/g/n ব্যান্ডের রাউটার গুলোর মূল্য ১000 – ২০০০ টাকা এর মধ্যেই হয়ে থাকে।
802.11ac ব্যান্ডের রাউটার গুলোর মূল্য ৩000 – ৫০০০ টাকা থেকে শুরু হয়।
অপরদিকে 802.11ax ব্যান্ডের রাউটার গুলো ৪০,০০০ টাকা অব্দি হয়ে থাকে।
সুতরাং, আমরা বাসায় কিংবা অফিসে একইসাথে বিভিন্ন ধরনের স্মার্ট ডিভাইস দিয়ে ইন্টানেট ব্যবহার করে থাকি। তাই সবার জন্য 802.11 b/g/n এর সিঙ্গেল ব্যান্ডের রাউটর গুলোই যথেষ্ট।
তবে আপনি যদি মনে করেন আপনার ওয়াইফাই এর ব্যবহারকারী আপনি একা নিজেই এবং আপনার ব্যবহৃত স্মার্ট ডিভাইসটির ও 5 GHz ডাটা টান্সমিট ক্ষমতা রয়েছে তাহলে আপনি 802.11ac মডেলের রাউটার ক্রয় করতে পারেন।
2. সিঙ্গেল ব্যান্ড নাকি ডুয়াল ব্যান্ড:
উপরেই আলোচনা করা হয়েছে সিঙ্গেল ব্যান্ড এবং ডুয়াল ব্যান্ড সম্পর্কে। যেহেতু এখানে ফ্রিকুয়েন্সির এবং কানেক্টিভিটির একটা বিষয় রয়েছে তাই আরো একটু বিস্তারিত আলোচনা করা যেতে পারে।
কিভাবে বুঝবেন কোনটা সিঙ্গেল ব্যান্ড আর কোনটা ডুয়াল ব্যান্ড রাউটার?
Data Rate | Band |
802.11 b/g/n | 2.4 GHz Only Single Band Router |
802.11ac | 5 GHz Only Single Band Router |
802.11 b/g/n /802.11ac | 2.4 GHz & 5 GHz Dual Band Router |
802.11ax | Triple Band Router |
উপরের টেবিলটি লক্ষ্য করুন, আপনার ওয়াইফাই রাউটার এর ডাটা রেট যদি শুধু 802.11 b/g/n হয় তাহলে সেটা 2.4 GHz এর সিঙ্গেল ব্যান্ড রাউটার। এবং ডাটা রেট শুধু 802.11ac হয় তাহলে সেটা শুধুমাত্র 5 GHz এর সিঙ্গেল ব্যান্ড রাউটার। কিন্তু আপানার রাউটারটির ডাটা রেট যদি 802.11 b/g/n এবং 802.11ac উভয় থাকে তাহলে সেই রাউটারটি 2.4 GHz এবং 5 GHz এর ডুয়াল ব্যান্ড রাউটার। এছাড়া 802.11ax ডাটা রেটের রাউটার গুলো 802.11 b/g/n /802.11ac এর আপডেট সংস্করন, এই রাউটার গুলো মূলত মিডিয়া স্ট্রিমিং এর কাজে ব্যবহৃত হয়।
বি:দ্র: আপনার ইন্টারনেট সংযোগ যদি 1 Mbps হয় তাহলে আপনার ওয়াইফাই রাউটার 2.4 GHz বা 5 GHz যেটাই হোক না কেন আপনি 1 MB এর বেশি স্পিড পাবেন না। আরো একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয় এই যে, 2.4 GHz এর সিঙ্গেল ব্যান্ডের রাউটার গুলো Up to 300 Mbps পর্যন্ত হয়ে থাকে। সুতরাং দামী রাউটার বা ডুয়াল ব্যান্ডের রাউটার হলেই যে বেশি স্পিড হবে, বিষয়টি মোটেও তা নয়।
এখন বিষয়টি হলো আপনি কোনটি কিনবেন? আপনার কোনটি প্রয়োজন?
বিষয়টি খুবই সিম্পল, দেখুন আমরা যারা বাসায় কিংবা অফিসে ওয়াইফাই ব্যবহার করে থাকি, সেখানে একই সাথে বিভিন্ন ধরনের ডিভাইস কনেক্টেড থাকে। যেমন আপনার ব্যবহৃত মোবাইলটির 5 GHz ডাটা ট্রান্সমিট ক্ষমতা থাকলেও বাকিদের মোবাইল 5 GHz সাপোর্টেড না ও হতে পারে।
দেখা গেলো একটি ওয়াইফাই রাউটার এ ৪ জন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী কনেক্টেড রয়েছে যাদের মধ্যে দুই জনের মোবাইল 5 GHz নেটওয়ার্ক সাপোর্টেড এবং বাকি দুই জনের মোবাইল 2.4 GHz সাপোর্টেড সুতরাং এখানে যদি আপনি আপনার রাউটারটি 5 GHz এ রাখেন তাহলে বাকি দুই জন ব্যবহারকারী ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবে না।
সুতরাং, এখানে আপনি ডুয়াল ব্যান্ডের ওয়াইফাই রাউটার কিনলেও সেটা সিঙ্গেল ব্যান্ডে ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু আপনি যদি আপনার রাউটারে একা ব্যবহারকারী হন বা মাঝে মধ্যে 5 GHz এর ডাটা ট্রান্সমিট সুবিধা পেতে চান তাহলে আপনি ডুয়াল ব্যান্ড সাপোর্টেড রাউটার কিনতে পারেন।
তবে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, 2.4 GHz এর সিঙ্গেল ব্যান্ডে আপনি যতদুর রেন্জে নেটওয়ার্ক কভারেজ পাবেন 5 GHz এ আপনি সেই পরিমান রেন্জ পাবেন না। এছাড়া 5 GHz এ আপনাকে যতটা সম্ভব ওয়াইফাই রাউটারের কাছাকাছি থাকতে হবে। অর্থাৎ 2.4 GHz থেকে 5 GHz এর নেটওয়ার্ক রেন্জ কভারেজ তুলনামূলক ভাবে কম।
কিন্তু চিন্তার কোন কারন নেই, এই সমস্যার সমাধান ও রয়েছে, আপনি যদি 5 GHz এর ডাটা ট্রান্সমিট সুবিধা এবং একই সাথে লং রেন্জের কভারেজ পেতে চানে তাহলে দাম অনেক বেশি হলেও 802.11ax মডেলের রাউটার ক্রয় করতে পারেন। 802.11ax ব্যান্ডের রাউটার গুলো মূলত কভারেজের এই সমস্যা সমাধান এবং মিডিয়া স্ট্রিমিং এর মতো বড় বড় কাজের জন্য তৈরি করা হয়েছে। এখানে আপনি যেমন 5 GHz এর থেকে বেশি ডাটা ট্রান্সমিশন সুবিধা পাবেন একই সাথে 2.4 GHz এর মতো কভারেজ ও পাবেন।
3. রাউটারের প্রসেসর এবং র্যাম:
রাউটারের প্রসেসর এবং র্যাম এই বিষয়গুলোর দিকে আমরা খুব কম নজর দিয়ে থাকি। কিন্তু একটি ওয়াইফাই রাউটার এর অভ্যন্তরে থাকা এই হার্ডওয়্যার গুলো খুবই গুরুত্বপূর্ন। আপনি যদি আপনার রাউটার দিয়ে হাই পারফরমেন্স অনলাইন গেম, ডেটা ব্যাকআপ বা মিডিয়া স্ট্রিমিং এর মতো বড় বড় কাজ করে থাকেন তাহলে রাউটারের প্রসেসর এবং র্যাম খুবই গুরুত্বপূর্ন।
কারন এই ধরনের কাজে প্রচুর পরিমানে ডেটা ট্রান্সমিট হয়, যার কারনে রাউটারের প্রসেসিং ক্ষমতাও বেশি থাকা প্রয়োজন।
সাধারন ভাবে আমাদের জন্য সিঙ্গেল কোর প্রসেসর এবং 32 এমবি র্যাম এর রাউটার যথেষ্ট। তবে মিডিয়া স্ট্রিমিং এর মতো বড় বড় কাজ করতে তা যথেষ্ট নয়। সুতরাং আপনি যদি একজন হেবি ইউজার হোন তাহলে রাউটার কেনার পূর্বে অবশ্যই কমপক্ষে ডুয়াল-কোর প্রসেসর এবং ১২৮ এমবি র্যাম এর রাউটার বাছাই করবেন।
ভালো ব্রান্ডের রাউটার গুলোতে অবশ্যই র্যাম এর পরিমান উল্লেখ থাকবে। তবে আপনি যদি কমদামী চাইনিজ ব্রান্ডের রাউটার ক্রয় করেন তাহলে সেখানে র্যাম বা প্রসেসর কোনটারই উল্লেখ থাকবে না। এমনকি ৩২ এমবি র্যাম ও সেগুলোতে পাবেন না।
4. রাউটার পারফর্মেন্স:
কোন রাউটার কেমন পারফর্মেন্স দিবে সেটা আগে থেকে নির্ধারন করা সম্ভব নয়। তাই এই ক্ষেত্রে আপনাকে ভালো ব্রান্ডের কোন একটি রাউটার কিনতে হবে।
বাসায় কিংবা অফিসে যত ধরনের স্মার্ট ডিভাইস গুলো রয়েছে তাদের মধ্যে ওয়াইফাই রাউটার একটু বেশিই চাপ নিয়ে থাকে। উদাহরন স্বরুপ, একটি রাউটারে কম করে হলেও একই সাথে একাধিক ডিভাইস সর্বদা কানেক্টেড থাকে। যেমন, মোবাইল, ল্যাপটপ, বিভিন্ন স্ট্রিমিং ডিভাইস, গেমিং কনসোল ইত্যাদি। আর এই ধরনের ওভারলোড এর কারনে কোন রাউটারের পারফর্মেন্স কেমন সেটা জানা যায়।
আমার নিজের পরীক্ষিত একটা বাস্তব উদাহরন দেওয়া যেতে পারে। আমি নিজে একই সাথে দুইটা ওয়াইফাই রাউটার ব্যবহার করি। একটি Netgear WNR614 (2 Antenna) এবং অন্যটি Tenda F6 (4 Antenna)।
প্রথমত Tenda F6 (4 Antenna) রাউটারটি যতদুর রেন্জে নেটওয়ার্ক কভারেজ পায় Netgear WNR614 (2 Antenna) ও একই নেটওয়ার্ক কভারেজ পায়।
দ্বীতিয়ত, যখন অনেক বেশি ওভারলোড হয়ে যায়, অর্থাৎ একই সাথে ৭-৮ টি ডিভাইস কানেক্টেড থাকলে Tenda F6 (4 Antenna) রাউটার থেকে অটোমেটিক ভাবে কিছু কিছু ডিভাইস ডিসকানেক্ট হয়ে যায় অর্থাৎ Tenda F6 (4 Antenna) রাউটারটি পর্যাপ্ত ওভারলোড নিতে সক্ষম না। কিন্তু অন্য দিকে, যতই বেশি ওভারলোড হোক না কেন Netgear WNR614 (2 Antenna) রাউটারটি নিরবিচ্ছিন্ন সংযোগ প্রদান করে যায়।
এখানে আরো একটি বিষয় উল্লেখ্য যে, Netgear WNR614 (2 Antenna) ওয়াইফাই রাউটারটির মূল্য 1650 টাকা অপরদিকে Tenda F6 (4 Antenna) রাউটারটি ৪ এন্টেনা হলে ও তার মূল্য ১৩০০ টাকা। সুতরাং ভালো ব্রান্ডের রাউটার কিনলে অর্থ যেমন একটু বেশি খরচ হবে তেমনি তার সার্ভিস ও সন্তোসজনক হবে। অন্যথায় কম দামে বেশি এন্টেনা দেখে আকৃষ্ট হলে কাজের ক্ষেত্রে তেমন লাভজনক হবেন না।
5. নেটওয়ার্ক কভারেজ রেন্জ:
ওয়াইফাই রাউটার এর কভারেজ রেন্জ এর উপর স্পীড এর তারতম্য দেখা দেয়। যেমন ওয়াইফাই রাউটারের একটি কমন বিষয় হলো আপনি রাউটার হতে যত বেশি দুরত্বে অবস্থান করবেন আপনার ইন্টারনেট স্পীড ততো কম পাবে। অর্থাৎ ভালো কভারেজ এবং ইন্টারনেট স্পীড পেতে হলে আপনার যতটা সম্ভব রাউটারের কাছাকাছি অবস্থান করতে হবে।
সেই হিসাবের উপর ভিত্তি করে আপনাকে রাউটারের অবস্থান ঠিক করতে হবে এবং আপনি কতদূর দূরত্ব পর্যন্ত রাউটারের নেটওয়ার্ক কভারেজ পেতে চান সেই কভারেজের রাউটার কিনতে হবে।
এর আগে আপনার একটি বিষয় জানা প্রয়োজন যে, একটি রাউটারারের নেটওয়ার্ক কভারেজ কিভাবে কাজ করে।
একটি রাউটারের নেটওয়ার্ক কভারেজ মূলত তার এন্টেনার পজিশনের উপর নির্ভর করে। অর্থাৎ আপনার রাউটারটির এন্টেনা যদি Horizontal অবস্থানে থাকে তাহলে Vertical বা উলম্ব ভাবে যতদূর নেটওয়ার্ক কভারেজ দিতে পারবে অন্য দিকে Horizontal ভাবে ততদূর নেটওয়ার্ক কভারেজ দিতে পারবে না।
অর্থাৎ, আপনার রাউটারটি যদি দোতালা ঘরে থাকে এবং আপনার রাউটরের এন্টেনা যদি Vertical বা উলম্ব ভাবে থাকে তাহলে পার্শ্ববর্তী রুম গুলোতে যতদূর পর্যন্ত নেটওয়ার্ক কভারেজ পাবে তেমনি ভাবে ৩য় তলার ছাদ বা ৪র্থ তলাতে তেমন নেটওয়ার্ক কভারেজ পাবে না।
সুতরাং আপনি যদি মনে করেন আপনার রাউটারটি Horizontal অর্থাৎ সমতল বা আড়াআড়ি ভাবে যতদূর পর্যন্ত নেটওয়ার্ক পাচ্ছে ঠিক তেমনি ভাবে Vertical বা উল্লম্ব ভাবেও ততদূর নেটওয়ার্ক পাবে তাহলে সেটা ভূল ধারনা।
তবে এর সমাধান ও রয়েছে, আপনার রাউটার যদি ২ এন্টেনার হয় তাহলে একটি এন্টেনা Horizontal এবং অন্য এন্টেনাটি Vertical বা উল্লম্ব ভাবে রাখুন। অর্থাৎ আপনি যেদিকে নেটওয়ার্ক কভারেজ বেশি চান আপনার রাউটারের এন্টেনাও সেই ভাবে রাখুন।
নেটওয়ার্ক কভারেজের আরো একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয় হলো, একটি রাউটার এর নেটওয়ার্ক কভারেজ যদি ৫০০ মিটার হয় তাহলে তার মানে এই না যে আপনার রাউটারের অবস্থান থেকে ৫০০ মিটার দূরত্ব পর্যন্ত আপনি নেটওয়ার্ক পাবেন।
উপরের ছবিটি লক্ষ্য করুন, আপনার রাউটারের নেটওয়ার্ক কভারেজ যদি ৫০০ মিটার হয় তাহলে তার মানে হলো আপনার রাউটারের অবস্থান হতে ডানে ২৫০ মিটার এবং বামে ২৫০ মিটার অর্থাৎ টোটাল ৫০০ মিটার নেটওয়ার্ক কভারেজ পাবেন।
এই ধারনা অনুসারে আপনাকে আপনার রাউটারের জন্য জায়গা নির্ধারন করতে হবে। অর্থাৎ আপনার রাউটারটির জন্য এমন জায়গায় নির্ধারন করুন যেখান থেকে আপনার সবগুলো ঘরে সমান দুরত্বে নেটওয়ার্ক পায়।
এক্ষেত্রেও ভালো ব্রান্ডের রাউটারের কোন বিকল্প নেই। কেননা আমি আগেই বলেছি আমার Netgear ২ এন্টেনা রাউটার যতদূর দূরত্বে নেটওয়ার্ক কভারেজ দেয় Tenda ৪ এন্টেনা রাউটারও একই দূরত্বে নেটওয়ার্ক কভারেজ দেয়।
এই বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানতে নিচের আর্টিকেলটি পড়ুন –
WiFi Antenna Position and Placement | WiFi Router Range and Direction.
সুতরাং রাউটার ক্রয় করার পূর্বে তার নেটওয়ার্ক কভারেজ সম্পর্কে জেনে নেওয়া প্রয়োজন।
6. ব্যান্ড-উইথ কন্ট্রোল:
একটি ওয়াইফাই রাউটার এর উল্লেখযোগ্য ফিচার সমুহের মধ্যে ব্যান্ড উইথ কন্ট্রোল খুবই গুরুত্বপূর্ন একটি ফিচার। ব্যান্ড-উইথ কন্ট্রোল হলো মূলত কোন ইউজার কতটুকু স্পীড পাবে সেটা নির্ধারন করা।
ধরা যাক, আপনার ওয়াইফাই রাউটার থেকে আপনার আরো দুই জন বন্ধু ইন্টারনেট সংযোগ নিয়েছে কিন্তু আপনি চান না তারা ফুল স্পীড পাক। তাহলে আপনাকে ব্যান্ড-উইথ কন্ট্রোল করতে হবে।
যেমন, মনে করুন, আপনার ইন্টারনেট স্পীড যদি 10 Mbps এবং আপনি চান আপনার বন্ধুরা সর্বোচ্চ 5Mbps এর বেশি পাবে না তাহলে রাউটারের ব্যান্ড-উইথ কন্ট্রোল সেটিংস থেকে আপনি আপনার বন্ধুদের ডিভাইস গুলোর Download Limit এবং Upload Limit কমিয়ে দিতে পারবেন।
অথবা এমনটি ও হতে পারে, কোন একটি সময় আপনার গুরুত্বপূর্ন বড় একটি ফাইল ডাউনলোড করা প্রয়োজন এবং সেই সময় ব্যান্ড-উইথ কন্ট্রোল এর মাধ্যমে বাকি ইউজারদের স্পীড কমিয়ে খুব দ্রুত নিজের কাজটি করে নিতে পারবেন।
অর্থাৎ Download Limit এবং Upload Limit এ আপনি যে স্পীড নির্ধারন করে দিবেন সেই ইউজার তার চেয়ে বেশি স্পীডে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবে না।
আমরা যারা অনলাইনে গেম প্লে করি তাদের জন্য এটি খুবই প্রয়োজনীয় একটি ফিচার। সুতরাং রাউটার কেনার আগে অবশ্যই তাতে ব্যান্ড-উইথ কন্ট্রোল সুবিধা আছে কিনা তা দেখে নিবেন।
7. Quality of Service (QoS)
সাধারনত সব ধরনের ওয়াইফাই রাউটার এ ব্যান্ড উইথ কন্ট্রোল অপশন থাকে না। আর সে ক্ষেত্রে Quality of Service (QoS) খুবই গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা পালন করে। একে মিডিয়া অগ্রাধিকার ও বলা হয়।
মনে করুন, আপনি অনলাইনে গেমস খেলতে পছন্দ করেন বা নেটফ্লিক্স এর মতো মিডিয়া স্ট্রিমিং করতে পছন্দ করেন। সে ক্ষেত্রে এই অপশনটি আপনি নির্দিষ্ট সময়ে যে কাজটি করছেন রাউটারটি সেই অনুকুলে পারফরমেন্স দিবে। অর্থাৎ আপনি যখন অনলাইনে গেমস খেলবেন বা মিডিয়া স্ট্রিমিং করবেন আপনার ওয়াইফাই রাউটারটি সেই সময় উক্ত কাজে বেশি ব্যান্ড উইথ দিবে।
অতিরিক্ত কিছু ফিচার
8. VPN, antivirus, firewall Protection
মার্কেটে অনেক ধরনের ওয়াইফাই রাউটার রয়েছে যে গুলো ভিপিএন, অ্যান্টিভাইরাস এবং ফায়ারওয়াল এর মতো দরকারী উন্নত বৈশিষ্ট্যগুলি সরবরাহ করে থাকে। যা ওয়াইফাই নেটওয়ার্ককে ম্যালওয়ার এবং বাইরের অন্যান্য আক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
এসব সুযোগ সুবিধা গুলো দুর্বল হার্ডওয়্যারযুক্ত ওয়াইফাই রাউটারগুলিতেও পাওয়া গেলেও সেগুলি ভালভাবে কাজ করতে পারে না। তাই আপনি যদি ভিপিএন এর মতো উন্নত সেবা ভালভাবে ব্যবহার করতে চান তাহলে কমদামী এবং লো পারফরমেন্স এর রাউটার গুলো কিনবেন না। তাই আপনি যদি এসব সুযোগ সুবিধা গুলো পেতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই শক্তিশালী হার্ডওয়্যার এবং বেশি র্যাম যুক্ত ওয়াইফাই রাউটার ক্রয় করতে হবে।
9. USB Port 3.0
ওয়াইফাই রাউটারে আমরা শুধু মাত্র ল্যান পোর্ট গুলোই দেখে থাকি। তবে কি USB Port এর কথা শুনে অবাক হচ্ছেন?
না, অবাক হবার কিছুই নেই। আসলে এটা সবার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ন ফিচার নয়। আমরা দৈনন্দিন জীবনে নানান প্রকার স্মার্ট ডিভাইস ব্যবহার করে থাকি যেমন, এক্সটার্নাল হার্ডড্রাইভ, প্রিন্টার ইত্যাদি।
ওয়াইফাই রাউটার এর USB Port ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই আপনার এক্সটার্নাল হার্ডড্রাইভটি এর প্রিন্টারের মতো ডিভাইস গুলো প্রয়োজনের সময় খুব দ্রুত কানেক্ট করতে পারবেন।
10. রাউটার স্মার্টফোন অ্যাপ
কিছুদিন আগে পর্যন্তও আমরা আমাদের ওয়াইফাই রাউটারটি ফার্মওয়্যারে কানেক্ট করার মাধ্যমে এক্সেস করে ব্রাউজারের মাধমে নিয়ন্ত্রন করতে পারতাম। কিন্তু এই জাতীয় সেটিংস গুলো দেখে অনেকে তা পরিচালনা করতে ভয় পান।
তবে বর্তমানে রাউটার নির্মাতা কোম্পানি গুলো তাদের রাউটারের স্মার্টফোন অ্যাপ তৈরি করছে। যার মাধ্যমে আমরা খুব সহজেই আমাদের রাউটার গুলোর সেটিংস পরিবর্তন থেকে শুরু করে অন্যান্য পরিচালনা করতে পারছি।
সুতরাং আপনি যদি এই সুবিধা গুলো পেতে চান তাহলে ওয়াইফাই রাউটার কেনার আগে উক্ত রাউটারে স্মার্টফোন অ্যাপ এর সুবিধা আছে কিনা দেখে নিতে পারেন।
=শেষ কথা=
নিজের সল্প জ্ঞ্যান থেকে ওয়াইফাই রাউটার কেনার আগে কোন কোন বিষয়ের দিকে লক্ষ্য রাখবেন সেই বিষয়ে আলোচনা করলাম। ভুল হলে অনুগ্রহ করে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
আর্টিকেলটি ভালো লাগলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন এবং পরবর্তী আর্টিকেল আসা পর্যন্ত ভালে থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।