মোবাইল ফোনের ব্যাটারি ভালো রাখার উপায় সমুহ

মোবাইল যেখানে আমাদের নিত্য দিনের সঙ্গী সেখানে ফোনের ব্যাটারি ভালো রাখার উপায় সমুহের একটি বিষয় থেকেই যাই। তাই আজকের আর্টিকেলে আমি আলোচনা করবো ফোনের ব্যাটারি ভালো রাখার উপায় সমুহ সম্পর্কে।

পৃথিবীতে সব কিছুরই শেষ রয়েছে। ঠিক তেমনি ভাবে আপনি যতই ভালো ভাবে বা যত্নের সাথে আপনার মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন না কেন, একটি সময় পর তার ও কার্যকারিতা শেষে হবে।
সুতরাং ফোনের ব্যাটারি ভালো রাখার উপায় সমুহ সম্পর্কে আমাদের জানা প্রয়োজন। প্রতিটা মোবাইলেই নির্দিষ্ট একটি চার্জিং সাইকেল থাকে। অর্থাৎ আপনি আপনার প্রিয় ফোনটি সর্বোচ্চ নির্দিষ্ট সংখ্যাক বার চার্জ করতে পারবেন। আর এই লিমিটটি 5000 থেকে শুরু করে 10,000 বার বা তার বেশি হতে পারে।

বিষয়টি উদাহরন সহ দেওয়া যেতে পারে, মনে করুন, আপনি আপনার ফোনটি সর্বোচ্চ 5000 বার চার্জ করতে পারবেন। অর্থাৎ 5000 বার চার্জ করার পর আপনার ফোনের ব্যাটারি তার কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলবে। এখন যদি আপনার ফোনটি দিনে দুইবার করে চার্জ দিতে হয় তাহলে বছরে 365*2=730 বার। অর্থাৎ মোটামুটি 5 বছরের মধ্যেই আপনার ফোনের ব্যাটারি তার কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে।

সুতরাং আপনি আপনার ফোনের চার্জ যত দীর্ঘক্ষন পর্যন্ত ধরে রাখতে পারবেন। ততো কম চার্জ দেওয়া প্রয়োজন হবে। এবং ব্যাটারি ও দীর্ঘ সময় তার যথাযথ কার্যক্ষমতা ধরে রাখতে পারবে। তাছাড়া মোবাইল ফোন ব্যবহারে আমাদের কিছু দৈনন্দিন ভুল রয়েছে যার কারনে আমারা আমাদের প্রিয় মোবাইল ফোনটির কার্যক্ষমতা খুব দ্রুত নষ্ট করে ফেলি।

তাহলে চলুন আলোচনা করা যাক ফোনের ব্যাটারি ভালো রাখার উপায় সমুহ সম্পর্কে।

ফোনের ব্যাটারি ভালো রাখার উপায়

এক নজরে আজকের আর্টিকেলে মোবাইল ফোনের ব্যাটারি ভালো রাখার উপায় সমুহ –

  1. লাইভ ওয়ালপেপার ব্যবহার না করা
  2. Battery Usage পর্যবেক্ষন
  3. অতিরিক্ত ব্রাইটনেস ব্যবহার না করা
  4. সম্পূর্ণভাবে ব্যাটারি ব্যবহার না করা
  5. অপ্রোজনীয় নোটিফিকেশন বন্ধ করা
  6. সর্বদা Bluetooth চালু না রাখা
  7. চার্জে থাকা অবস্থায় ফোন ব্যবহার
  8. স্ক্রিন টাইম আউট অপশন ব্যবহার
  9. খারাপ সিগন্যালে এরোপ্লেন মুড ব্যবহার
  10. ডার্ক মুড ব্যবহার
  11. অতিরিক্ত গরম বা ঠান্ডা থেকে ফোন দুরে রাখুন
  12. অটো আপডেট বন্ধ রাখুন
  13. অপ্রয়োজনে ভাইব্রেশন অপশন বন্ধ রাখুন
  14. ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাক্টিভিটি বন্ধ রাখা
  15. থার্ড পার্টি চার্জার ব্যবহার
  16. ফাষ্ট চার্জার ব্যবহার
  17. এন্টিভাইরাস ব্যবহার না করা
  18. ক্লিনার এবং পাওয়ার সেভিং এর মতো ইউটিলিটি অ্যাপ এর ব্যবহার
  19. নির্দিষ্ট সময় পর পর ফোন চার্জ করা

আরো পড়ুন –
Shutterstock এ মোবাইল দিয়ে তোলা ছবি বিক্রি করে আয় করুন।

1. লাইভ ওয়ালপেপার ব্যবহার না করা

আমরা প্রায়শই নতুনত্ব কিংবা সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য মোবাইল ফোনে লাইভ ওয়ালপেপার ব্যবহার করে থাকি। যদিও তা দেখতে যেমন সুন্দর লাগে তেমনি আমাদের ফোন গুলোতে ও আলাদা একটা লুক দিতে সহায়তা করে।

কিন্তু আপনি জানলে অবাক হবেন, এই লাইভ ওয়ালপেপার গুলো এক প্রকার আমাদের বিরুদ্ধে কাজ করে থাকে। কেননা লাইভ ওয়ালপেপার গুলো সর্বদা আমাদের মোবাইল ফোনের প্রসেসিং প্রক্রিয়াকে সচল রাখে, যার দরুন তা অনবরত ফোনের ব্যাটারি কনজিউম করতে থাকে।

2. Battery Usage পর্যবেক্ষন

আপনি অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারী হোন কিংবা আইফোন ব্যবহাকারী হোন আপনার ফোনের সেটিংস এ Battery নামক একটি অপশন দেখতে পাবেন। সেখান থেকে আপনার ফোনের কোন অ্যাপস গুলো কি পরিমান ব্যাটারি কনজিউম করছে তার বিস্তারিত পেয়ে যাবেন।

Settings > Battery > Battery Usages

এখানে ভালো ভাবে লক্ষ্য করুন, আপনার ফোনের কোন অ্যাপ গুলো কি পরিমান ব্যাটারি কনজিউম করছে। এবং এমন কোন অ্যাপ যদি থেকে থাকে যেটা আপনি ব্যবহার করেন না কিন্তু সেটা আপনার ফোনের ব্যাটারি কনজিউম করছে তাহলে সেটা তাৎক্ষনিক ভাবে ডিলিট করে ফেলুন।

3. অতিরিক্ত ব্রাইটনেস ব্যবহার না করা

ফোনের ব্যাটারি ভালো রাখার উপায় সমুহের মধ্যে ব্রাইটনেস খুবই গুরুত্বপূর্ন। আপনারা একটা বিষয় লক্ষ্য করলে দেখবেন, সারাদিন মোবাইল ফোন ব্যবহার করা শেষে ফোনের ব্যাটারি ইউজেসে আপনার কোন অ্যাপ কি পরিমান চার্জ কনজিউম করেছে, সেখানে যেই অ্যাপই থাকুক ফোনের স্ক্রিন ১/২ নম্বার পজিশনে থাকবে।

আর মোবাইল ফোনে অতিরিক্ত ব্রাইটনেস মানেই অতিরিক্ত ব্যাটারি কনজিউম। ফোনের ব্রাইটনেস কন্ট্রোল এর জন্য আপনি Auto Brightness Mode ব্যবহার করতে পারেন। তবে আমি বলবো ম্যানুয়ালি নিজের প্রয়োজন মতো ফোনেস ব্রাইটনেস ব্যবহার করুন।

4. সম্পূর্ণভাবে ব্যাটারি ব্যবহার না করা

ফোনের ব্যাটারি ভালো রাখার উপায় সমুহের মধ্যে আরো একটি গুরুত্বপূর্ন উপায় হলো ব্যাটারির সম্পূর্ন ব্যবহার। দৈনন্দিন জীবনে মোবাইল ব্যবহার করার ক্ষেত্রে আমরা অনেকেই একটি কমন ভুল করে থাকি। আর সেটি হচ্ছে মোবাইল ফোনের ব্যাটারি সম্পূর্ণ ভাবে ব্যবহার করা। আরো পরিষ্কারভাবে বলতে গেলে, আমরা অনেকেই মোবাইল ফোনের ব্যাটারি 20 পার্সেন্ট বা তার নিচে চলে এলে তখনই কেবল মোবাইল ফোন চার্জ করি। অর্থাৎ যতক্ষণ না ফোনে লো ব্যাটারি নোটিফিকেশন না দেখাবি ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা মোবাইল ফোন ব্যবহার করে থাকি।

বিভিন্ন রিসার্চ অনুযায়ী, মোবাইল ফোনের ব্যাটারি লেভেল সর্বদা 40 থেকে 100 শতাংশ এর মধ্যে থাকা প্রয়োজন। অর্থাৎ আপনার ফোনের ব্যাটারি লেভেল যখন 40% বা তার কমে চলে আসবে তখনি মোবাইল ফোনের ব্যাটারি চার্জ করা উচিত।

অর্থাৎ মোবাইল ফোনের ব্যাটারি দীর্ঘায়ুর জন্য সর্বদা ব্যাটারি লেভেল 40 থেকে 100% এর মধ্যে রাখার চেষ্টা করবেন।

5. অপ্রোজনীয় নোটিফিকেশন বন্ধ করা

আমরা মোবাইল ফোনে সব সময়ই বিভিন্ন ধরনের অ্যাপ ব্যবহার করে থাকি। আর এই অ্যাপ গুলো বিভিন্ন সময় ভেদে নিজের মতন করে আমাদের নোটিফিকেশন প্রদান করে থাকে।
কিন্তু আপনার ফোনে ব্যবহৃত যে সকল অ্যাপস এর নোটিফিকেশন আপনার প্রয়োজন নেই। সেই সমস্ত অ্যাপস গুলোর নোটিফিকেশন বন্ধ করে রাখা উচিত।

কেননা এই নোটিফিকেশন গুলো বিভিন্ন অ্যাপস এর ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাক্টিভিটি থেকে এসে থাকে। যা প্রতিনিয়ত আপনার মোবাইল ফোনের ব্যাটারি কনজিউম করে থাকি।

সুতরাং যে সমস্ত অ্যাপস এর নোটিফিকেশন প্রয়োজন নেই বলে মনে করেন সে সমস্ত অ্যাপস গুলোর পুশ আপ বা পপ-আপ নোটিফিকেশন গুলো বন্ধ করে রাখুন। এটা আপনার ফোনকে অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যাটারি কনজিউম থেকে রক্ষা করবে।

6. সর্বদা Bluetooth চালু না রাখা

ফোনের ব্যাটারি ভালো রাখার উপায় সমুহের মধ্যে Bluetooth এবং Wifi অন্যতম ভুমিকা পালন করে। আজ 2020 সালে এসে যখন ওয়াইফাইয়ের রমরমা বাজার তবু আমরা অনেকেই Bluetooth কে পুরোপুরি বিদায় জানাতে পারিনি। এখনো আমাদের মধ্যে বেশির ভাগ স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর নিকট ব্লুটুথ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রযুক্তি।

যেহেতু ব্লুটুথ প্রযুক্তিটি পূর্বের তুলনায় এখন অনেক বেশি উন্নত তাই আমরা প্রায়শই বিভিন্ন কাজে যেমন ব্লুটুথ স্পিকার, বা Bluetooth স্মার্ট ডিভাইস এর ক্ষেত্রে Bluetooth ব্যবহার করে চলেছি। কিন্তু আমরা অনেকেই ভেবে দেখি না বেশিরভাগ সময়ই আমরা মনের অজান্তেই Bluetooth ফাংশনটি চালু করে রাখি। যা আমাদের মোবাইল ফোন গুলোতে ব্যাটারি কনজিউম হতে থাকে।

এখন আমাদের অনেকেরই মনে প্রশ্ন আসতে পারে, যখন আমরা কোনো Bluetooth ডিভাইস যে আমাদের স্মার্টফোনটি কানেক্ট করব না তখন ফাংশনটি অন রাখলে ক্ষতি কি?

উত্তরটা খুবই সহজ। আপনার স্মার্টফোনটি কোন প্রকার Bluetooth ডিভাইস এর সাথে কানেক্ট না থাকলেও Bluetooth ফাংশনটি চালু রাখার দরুন তারা প্রতিনিয়ত নির্দিষ্ট সময় পরপর নতুন কোন ডিভাইস পাওয়ার জন্য স্ক্যান করতে থাকে, যা ব্যাকগ্রাউন্ডে ব্যাটারি কনজিউম এর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
তাই স্মার্টফোনের ব্যাটারি গুলোর দীর্ঘায়ুর জন্য আমাদের এই ছোটখাটো বিষয়গুলো ও বিবেচনায় রাখতে হবে। সুতরাং অপ্রয়োজনে কখনো Bluetooth কিংবা ওয়াইফাই ফাংশনটি চালু না রাখাই উত্তম।

7. চার্জে থাকা অবস্থায় ফোন ব্যবহার

মোবাইল ফোন একটি ইলেকট্রিক ডিভাইজ হলে ও তার ও নির্দিষ্ট সময় পর ব্রেক বা রেস্টের প্রয়োজন হয়। অনুগ্রহ করে মোবাইল ফোন প্লাগইন বা চার্জরত অবস্থায় সেটা ব্যবহার করবেন না। অর্থাৎ মোবাইল ফোন চার্জে থাকাকালীন অবস্থায় সেটা যথা সম্ভব আইডল রাখার চেষ্টা করুন।

আমরা অনেকেই ফোন চার্জে দেওয়া অবস্থায় গেম প্লে করি বা মুভি দেখি। যেটা মোটেও ঠিক নয়। এটা আপনার ফোনের চার্জে বিঘ্ন ঘটায়। যা একটি ব্যাটারির চার্জিং সাইকেলের জন্য খুবই ক্ষতিকর। বিষয়টি খুব স্বাভাবিক মনে হলে ও ফোনের ব্যাটারি ভালো রাখার উপায় সমুহের মধ্যে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ন।

8. স্ক্রিন টাইম আউট অপশন ব্যবহার

স্ক্রিন টাইম আউট অপশনের সাথে আমরা কম বেশি সবাই পরিচিত। তবে যারা নামটি শুনে এখনো বুঝতে পারছেন না। তাদের জন্য একটু বলে রাখি। আপনারা হয়তবা লক্ষ্য করে থাকবেন, মোবাইল ফোন রেখে দেওয়ার নিদিষ্ট একটি সময় পর ফোনের ডিসপ্লে অফ হয়ে যায়। এটাই স্ক্রিন টাইম আউট অপশনের কাজ।

আপনি যদি এই অপশনটিতে কোন ধরনের পরিবর্তন না করে থাকেন তাহলে এটা সাধারনত ১ থেকে ২ মিনিট পর কার্যকর হয়ে থাকে। অর্থাৎ আপনার ফোনের ডিসপ্লে স্বাভাবিক ভাবে ১ বা ২ মিনিট পর অফ হয়ে যায়। যেটা আপাত দৃষ্টিতে একটু বেশি সময় বলে ধরে নেওয়া হয়।

সুতরাং আপনি চাইলে আপনার ফোনের স্ক্রিন টাইম আউট সময়টি ৩০ বা ১৫ সেকেন্ডে কমিয়ে আনতে পারেন। এটি আপনার ফোনের ব্যাটারি লাইফ বৃদ্ধি করতে সহায়তা করবে।

স্ক্রিন টাইম আউট অপশনটি আপনার ফোনের Display Setting বা Lock Screen Settings এ থাকতে পারে।

মোবাইল ফোনের ব্যাটারি ভালো রাখার জন্য ফোনের অযথা ব্যাটারি কনজিউম বন্ধ করা দরকার আর তাই ফোনের ব্যাটারি ভালো রাখার উপায় সমুহের মধ্যে স্ক্রিন টাইম আউট অপশনটি ও অনেক গুরুত্বপূর্ন।

9. খারাপ সিগন্যালে এরোপ্লেন মুড ব্যবহার

প্রায়শই লক্ষ্য করবেন, কোথাও ঘুরতে গেলে বা ভ্রমনের সময় মোবাইলের নেটওয়ার্ক অনেক বেশি আপ-ডাউন করে। সেই মুহুর্তে মোবাইল ফোন গুলোতে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অনেক বেশি চার্জ কনজিউম হয়। কেননা, উক্ত সময়ে মোবাইল ফোন গুলো অনবরত ভালো সিগন্যালের জন্য নেটওয়ার্ক সার্চ করতে থাকে।

তাহলে কি করবেন সেই সময়ে? সবচেয়ে ভালো হয় যদি আপনি আপনার ফোনটি লো সিগন্যালের সময় ফ্লাইট মুড বা এরোপ্লেন মুডে রাখেন। এবং কোথাও লো সিগন্যাল পেলে সেখানে মোবাইল/সেলুলার নেটওয়ার্ক ব্যবহার না করে ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা উত্তম। এটি আপনার ফোনকে অযথা ব্যাটারি কনজিউম থেকে রক্ষা করবে।

10. ডার্ক মুড ব্যবহার

আপানার ফোনে যদি ডার্ক মুড অপশন থাকে তাহলে অবশ্যই সেটা ব্যবহার করবেন। কেননা স্বাভাবিকের তুলনায় এই অপশনটি অনেক বেশি ব্যাটারি কনজিউম হতে ফোনকে রক্ষা করাবে।
তবে আপনার ফোনের ডিসপ্লে যদি AMOLED না হয় তাহলে এই ডার্কমুড অপশনটি খুব বেশি কাজে দিবে না।

11. অতিরিক্ত গরম বা ঠান্ডা থেকে ফোন দুরে রাখুন

অতিরিক্ত ঠান্ডা আবহাওয়া ইলেকট্রিক ডিভাইস গুলোর কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং একই সাথে অতিরিক্ত গরম আবহাওয়া ফোনের ব্যাটারিতে খারাপ কেমিকেল রিঅ্যাকশান তৈরি করে। যা আপনার ফোনের জন্য মারাত্তক ক্ষতিকর।

সুতরাং শুধু মোবাইল ফোন নয় যে কোন ধরনের ইলেকট্রিক ডিভাইস আতিরিক্ত গরম বা ঠান্ডা আবহাওয়া থেকে দুরে রাখুন।

12. অটো আপডেট বন্ধ রাখুন

আমরা এই ভুলটি প্রায় সকলেই করে থাকি। কোন প্রয়োজন ছাড়াই ফোনের মধ্যে থাকা অ্যাপ গুলোর অটোমেটিক আপডেট অন করে রাখি। যা মোবাইল ফোন গুলোর অতিরিক্ত ব্যাটারি কনজিউম এর জন্য দায়ী।

কেননা, ফোনের অ্যাপ গুলোর অটোমেটিক আপডেট অন রাখলে তা স্বাভাবিক ভাবে ব্যাকগ্রাউন্ডে অনবরত নতুন আপডেটের জন্য সার্চ করতে থাকবে। যাকে আমরা ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাক্টিভিটি বলে চিনে থাকি।

সুতরাং বুঝতেই পারছেন অটোমেটিক আপডেট মানে হলো অযথা বেশি পরিমান ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাক্টিভিটি, যা ফোনের ব্যাটারি কনজিউমের কারন।

13. অপ্রয়োজনে ভাইব্রেশন অপশন বন্ধ রাখুন

বিভিন্ন ক্ষেত্রে বা কাজে আমাদের মোবাইল ফোনে ভাইব্রেশন অপশনটির প্রয়োজন হয়। যেমন কোলাহলপূর্ন কোন স্থানে বা ভ্রমনের সময় বা এমন কোন স্থানে যেখানে ফোন সাইলেন্ট রাখার প্রয়োজন হয়, এবং ওই মুহুর্তে আমরা জরুরী ফোন কল গুলোও মিস করতে চাই না। তার জন্য আমরা আমদের ফোনে ভাইব্রেশন অন করে রাখি। তবে এটা জরুরী প্রয়োজনে।

কিন্তু আমরা অনেকেই এই ভাইব্রেশন অপশনটি বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার করে থাকি। যেমন, ফোনের কিপ্যাডে, অ্যালার্মে বা ভার্চুয়াল অন্যান্য কি প্রেসে, যা আমাদের ফোনে অপ্রয়োজনীয় ব্যাটারী কনজিউম করে। আর এটা আমদের ফোনের ব্যাটারীর লং লাইফের জন্য ক্ষতিকর।

14. ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাক্টিভিটি বন্ধ রাখা

আমরা আমাদের ফোনে বিভিন্ন প্রকার অ্যাপ ব্যবহার করে থাকি। তবে সব গুলো অ্যাপের ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাক্টিভিটি চালু রাখার প্রয়োজন হয় না। যেমন মনে করুন, মেসেন্জোর অ্যাপ এর কথাই বলা যাক। ফেসবুক এবং মেসেন্জার এখন আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় অ্যাপস গুলোর মধ্যে একটি।

আপনারা লক্ষ্য করলে দেখবেন, আপনার ফোনে ইন্টারনেট কানেকশন থাকলে, কেউ আপনাকে মেসেন্জারে মেসেজ দিলেই সেটার সাথে সাথেই নোটিফিকেশন চলে আসে। তার মানে এই মেসেন্জার অ্যাপসটি ব্যাকগ্রাউন্ডে তার কার্যক্রম চালু রাখে। তবে আপনি যদি মেসেন্জারের ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাক্টিভিটি বন্ধ করে রাখেন তাহলে আপনার মেসেন্জারে মেসেজ আসবে ঠিকই কিন্তু আপনি নিজে যতক্ষন না মেসেন্জার অ্যাপ ওপেন না করবেন ততক্ষন পর্যন্ত আপনাকে কোন প্রকার নোটিফিকেশন দেখাবে না।

ঠিক এইরকম অনেক ধরনের অ্যাপ রয়েছে যেগুলোর ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাক্টিভিটি আমাদের প্রয়োজন না ও হতে পারে। সেই সব অ্যাপ গুলোর ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাক্টিভিটি বন্ধ করার মাধ্যমে আপনি আপনার ফোনকে অতিরিক্ত ব্যাটারি কনজিউম হতে রক্ষা করতে পারেন।

ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাক্টিভিটি বন্ধ করতে আপনাকে কিছু সতর্কতা মেনে চলতে হবে –

মোবাইল ফোনের অ্যাপ গুলোর ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাক্টিভিটি বন্ধ রাখার আরো একটি সাইড ইফেক্ট ও রয়েছে। এই বিষয়ে আপনাকে একটু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। আপনি শুধু মাত্র সেই অ্যাপ গুলোর ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাক্টিভিটি বন্ধ রাখবেন যে অ্যাপ গুলো আপনি খুব বেশি ব্যবহার করেন না। যেমন মনে করুন, আমি উদাহরন দেওয়ার জন্য মেসেন্জার অ্যাাপের কথা বললাম। কিন্তু মেসেন্জার আমাদের অনেকেরই অতি প্রয়োজনীয় একটি অ্যাপ।

এখন আপনি যদি বার বার ব্যবহৃত কোন অ্যাপের ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাক্টিভিটি বন্ধ করে রাখেন। তাহলে উক্ত অ্যাপ গুলো বার বার ওপেন করার সময় প্রয়োজনের তুলনায় একটু বেশি রিসোর্স এবং পাওয়ারে প্রয়োজন হবে। যা আপনার ফোনের ব্যাটারির অতিরিক্ত ব্যাটরি কনজিউমের কারন হয়ে দাড়াবে।
সুতরাং যে সমস্ত অ্যাপ গুলো আপনার খুব বেশি ব্যাবহার করা হয় না শুধু মাত্র সেই সমস্ত অ্যাপ গুলোর ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাক্টিভিটি বন্ধ করে রাখুন।

15. থার্ড পার্টি চার্জার ব্যবহার

ফোনের ব্যাটারি ভালো রাখার উপায় সমুহের মধ্যে অন্যতম হলো থার্ড পার্টি চার্জার ব্যবহার না করা। আমরা প্রায়শই কোথাও বেড়াতে গেলে বা বাসার বাইরে থাকলে আর সেই মুহুর্তে মোবাইল ফোন চার্জে দেওয়ার প্রয়োজন হলে হাতের কাছে যে কোন চার্জার পেলেই তা দিয়ে ফোন চার্জ দিয়ে থাকি। যেটা মারাত্তক একটা ভুল। কেনানা সকল ফোনের চার্জার একই ধরনের পাওয়ার সাপ্লাই দেয় না।

উদাহরন সরুপ বলতে গেলে, SAMSUNG কোম্পানির 5 ওয়াটের একটি চার্জার যে পরিমান বা যে সমান্তরাল ভাবে পাওয়ার সাপ্লাই দিবে, লোকাল কোন কোম্পানি বা কোম্পানি বিহীন চার্জার গুলো সেই সমান পরিমানে পাওয়ার সাপ্লাই দিতে পারবে না। তাছাড়া অফিশিয়াল চার্জার গুলোতে বিভিন্ন ধরনের সেফটি সেটিংস থাকে যা আন অফিশিয়াল চার্জার গুলোতে থাকে না।

আর এই ধরনের চার্জার ব্যবহারে আপনার ফোনের চার্জ ক্যাপাসিটি সাইকেলের মারাত্তক ক্ষতি হতে পারে। যা ব্যাটারি ফুলে যাওয়া থেকে শুরু করে ব্যাটারি ক্যাপাসিটি কমে যাবার মতো সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।

16. ফাষ্ট চার্জার ব্যবহার

ধরুন আপনার ফোনটি ফাষ্ট চার্জিং সাপোর্ট করে না। কিন্তু আপনি হাতের কাছে একটি ফাষ্ট চার্জার পেলেন এবং তা দিয়ে চার্জ দিয়ে দেখলেন আপনার ফোনটি খুব দ্রুত চার্জ হয়ে যাচ্ছে। প্রথমে খুব মজাই পেতে পারেন। কিন্তু বিষয়টি হলো এটি আপনার ফোনের ব্যাটারি ফুলে যাওয়ার মতো ক্ষতিকর সমস্যার কারন হতে পারে।

২০১৪ সালের দিকে আমি SAMSUNG GALAXY J5 ফোন ব্যবহার করতাম। আর তার সাথে ছিলো 1.5A এর একটি চার্জার কিন্তু হাতের কাছে পাওয়া 2.0A এর একটি চার্জার দিয়ে চার্জ দিয়ে দেখা গেলো চার্জ আগের তুলোনায় খুব দ্রুত হচ্ছে। ব্যাস, মাত্র ৫-৬ বার চার্জ দিয়েই দেখলাম আমারা ফোনের ব্যাটারি ফুলে গেছে।

তবে আপনার ফোনটি যদি ফাষ্ট চার্জ সাপোর্ট করে তাহলে অবশ্যই তার সাথে থাকা ফাষ্ট চার্জার দিয়েই চার্জ দিবেন।

17. এন্টিভাইরাস ব্যবহার না করা

ভাইরাস থেকে প্রিয় মোবাইলটি বাচানোর জন্য আমরা অনেকেই আমাদের মোবাইল ফোনে এন্টিভাইরাস অ্যাপ ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না অ্যান্ড্রয়েড কিংবা আইফোন উভয় ডিভাইসেই বিল্টইন ভাইরাস প্রটেকশন থাকে।

ফলসরুপ এই এন্টিভাইরাস অ্যাপ গুলো অযথায় আমাদের ফোনের স্টোরেজ এবং র‌্যামে জায়গা দখল করে, যার কারনে আমদের ফোন স্লো থেকে শুরু করে অতিরিক্ত ব্যাটারি কনজিউম হয়ে থাকে।

18. ক্লিনার এবং পাওয়ার সেভিং এর মতো ইউটিলিটি অ্যাপ ব্যবহার না করা

মোবাইল ফোন ব্যাটারির চার্জ দীর্ঘক্ষন ধরে রাখার জন্য এবং মোবাইলের মধ্যে বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় Junk ফাইল রিমুভ করার জন্য আমরা বিভিন্ন প্রকার পাওয়ার সেভিং অ্যাপ এবং ক্লিনার অ্যাপস ব্যবহার করে থাকি।

তবে এখানেও আমাদের অনেকেই মারাত্তক একটি ভুল করে ফেলি। সেটা হলো, এই ধরনের ক্লিনার কিংবা পাওয়ার সেভিং অ্যাপ যেটার কথায় বলেন না কেন। তা পূর্ব থেকেই আমাদের ফোন গুলোতে বিল্টইন দেওয়া থাকে। আর এই ধরনের অ্যাপ গুলো কেবলই এন্টিভাইরাস অ্যাপ এর ন্যায় ফোন স্টোরেজের জায়গা দখল, ফোন স্লো এবং অতিরিক্ত ব্যাটারি কনজিউম এর কারন হয়ে দাড়ায়।

19. নির্দিষ্ট সময় পর পর ফোন চার্জ করা

আপনি যদি দিনে একবার ফোন চার্জ করেন তাহলে দিনে বা রাতে যে কোন একটা সময় ফোন চার্জ করার চেষ্টা করুন। যেমন, আপনি যদি সকালে ফোন চার্জ করে থাকেন তাহলে প্রতিদিন সকালে ফোন চার্জ করুন। এতে করে আপনার ফোনের ব্যাটারি নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী চার্জ এবং ডিসচার্জ হবে।

=শেষ কথা=

উপরোক্ত ফোনের ব্যাটারি ভালো রাখার উপায় মেনে চলতে পারলে খুব সহজেই আপনি আপনার ফোনের ব্যাটারি লাইফ বৃদ্ধি করতে পারেন।

আর্টিকেলটি ভালো লাগলে অনুগ্রহ করে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন।

ইমেজ ক্রেডিট – Pixabay

Share this

Leave a Comment

error: Content is protected !!